শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হানিফ ফ্লাইওভারে যে কারণে নিত্যদিন যানজট

অনলাইন ডেস্ক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১৭, ২০২৪

হানিফ ফ্লাইওভারে যে কারণে নিত্যদিন যানজট
রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভার ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় যানজট এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকার শনির আখড়া বা দোলাইরপাড় পৌঁছা যায় দুই ঘণ্টায়। আর সেখান থেকে যাত্রাবাড়ী ও হানিফ ফ্লাইওভার পার হতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। 

হানিফ ফ্লাইওভার এলাকায় কেন এই যানজট? সরেজমিন এর কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে– সড়কে গর্ত, টিটিপাড়া-কমলাপুরের সংযোগ রাস্তা বন্ধ, ফ্লাইওভারে মুখে বাস-লেগুনা থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো, ফ্লাইওভারের ওপর যাত্রীর অপেক্ষা ও চলাচল, টোলপ্লাজায় দীর্ঘ সময় ব্যয়, বাসের এলোমেলো চলাচল, যত্রতত্র দোকান বসানো ও যানবাহন পার্কিং, ট্রাফিক আইন অমান্য, ট্রাফিক পুলিশের স্বল্পতা,  উল্টোপথে গাড়ি চলাচল, ফ্লাইওভারের নিচে সংকীর্ণ সড়ক, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল ইত্যাদি। 


দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৬ জেলা ও সিলেট বিভাগের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ করে যাত্রাবাড়ী দিয়ে। হানিফ ফ্লাইওভার পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের তথ্য অনুযায়ী, দুই মাস ধরে এই ফ্লাইওভার দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ৬৪ হাজার ৯১৭টি গাড়ি চলাচল করছে। এর মধ্যে ঢাকায় প্রবেশ করে ৩০ হাজার ৫১১ এবং ঢাকা ছেড়ে যায় ৩৪ হাজার ৪০৬টি। গত জুলাইয়ের আগে অবশ্য এই সংখ্যা ছিল গড়ে ৫০-৫২ হাজার। তবে ফ্লাইওভার ছাড়াও নিচের সড়কে অনেক গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ করে, যার পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের উপব্যবস্থাপক (সেফটি অ্যান্ড ট্রাফিক) নাইফ উদ্দিন খান বলেন, ‘গত ৫ আগস্টের পর ফ্লাইওভারে গাড়ি চলাচল বেড়েছে। কারণ হলো, যেসব যানবাহনের আগে ঢাকায় ঢোকার অনুমতি ছিল না, সেগুলোও এখন বিনা বাধায় ঢুকছে। গাড়িগুলো গোলাপবাগ, চানখাঁরপুল ও গুলিস্তানে নামার পর যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী তোলার কারণে যানজট তৈরি হচ্ছে। ওই যানজট এসে ঠেকছে ফ্লাইওভারে।’ 

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে কে কে ট্রাভেলসের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মো. সোহাগ জানান, তাঁর কোম্পানির বাস নোয়াখালী থেকে শনির আখড়ায় আসে সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টায়। আর শনির আখড়া থেকে হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে টিটিপাড়ায় যায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টায়। 

ফ্লাইওভারে ঘণ্টা পর ঘণ্টা

গত মঙ্গলবার দুপুর ২টা ৪০ মিনিট। গুলিস্তানে হানিফ ফ্লাইওভারে টোল দেন দোলা পরিবহন বাসের চালক বদিউজ্জামান বাবু। টোল দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। কারণ, সামনে গাড়ির লম্বা লাইন। বদিউজ্জামান সমকালকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টায় পিরোজপুর থেকে রওনা দিয়ে দুপুর ১টা ১০ মিনিটে দোলাইরপাড়ে আসি। সেখান থেকে রওনা হয়ে হানিফ ফ্লাইওভার পার হতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টার বেশি।’

একই দিন দুপুরে গুলিস্তানে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের অর্ধেকজুড়ে পার্ক করা বাস, অটোরিকশা, লেগুনা, মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। গাড়ি চলে এক লেনে, তাও থেমে থেমে। এতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। গুলিস্তান টোলপ্লাজা পার হয়ে আহাদ পুলিশ ফাঁড়ি বক্স সংলগ্ন মোড় ঘোরার সময় গাড়ি চলছে এলোমেলো। ফ্লাইওভার থেকে নেমে আসা যানবাহনের পাশাপাশি কাপ্তান বাজার ও নবাবপুর রোডে চলাচলকারী গাড়িও এই মোড় ব্যবহার করে। ফলে একদিকে গাড়ি চললে বন্ধ থাকছে আরেক দিক।

রাস্তাজুড়ে খানাখন্দ

যাত্রাবাড়ী দিয়ে ঢাকায় যেসব যানবাহন প্রবেশ করে, তার একটি অংশ হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে গোলাপবাগ প্রান্তে নামে। কিন্তু গোলাপবাগ থেকে টিটিপাড়া পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা বেহাল। এ ছাড়া টিটিপাড়া থেকে কমলাপুর সড়কে চলছে আন্ডারপাসের কাজ। ফলে অনেক দিন ধরে যান চলাচল বন্ধ। ওই সড়কের গাড়ি ব্যবহার করছে মুগদা সড়ক। এতে ওই সড়কে তৈরি হয়েছে গাড়ির চাপ। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশার এলোমেলো চলাচল। ফলে সায়েদাবাদ পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। ফ্লাইওভার থেকে গাড়ি নামতেও সময় লাগে। গুলিস্তান ও চানখারপুলমুখী গাড়ি ফ্লাইওভারে আটকে থাকে।

সরেজমিন দেখা যায়, গোলাপবাগ থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত কাজ চলার কারণে সড়ক সংকীর্ণ হয়ে গেছে। এক-দুই হাত পর পরই বড় বড় গর্ত, যেখানে পানি জমে আছে।

৯ ফুট প্রস্থের সড়ক

সায়েদাবাদ রেলগেট থেকে যাত্রাবাড়ী মোড় পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই করুণ। হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণে সড়কটির মরণদশা। ফ্লাইওভারের পিলার ও মাঝখানের মিডিয়ানের (উঁচু প্রশস্ত জায়গা) কারণে সরু হয়ে গেছে এই রাস্তা। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি ভাঙাচোরা। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন সড়কটি সংস্কার হয় না। যাত্রাবাড়ী মোড়ের অদূরে প্রিন্স চায়নিজ অ্যান্ড পার্ট সেন্টারের সামনের অংশের সড়কে রয়েছে (ফ্লাইওভারের নিচে) তিনটি মিডিয়ান। একটি প্রস্থে ১৭ ফুট এবং অপর দুটি প্রায় ৯ ফুট করে। এর মাঝে দুটি সড়ক প্রস্থে ৯ থেকে ১০ ফুট। এসব সড়কে একটি বাস চললে সেটিকে পাশ কাটানোর সুযোগ নেই।

সড়কে উল্টে যায় গাড়ি

যাত্রাবাড়ী গোলচত্বরের আশপাশে বেশির ভাগ সড়ক ব্যবহার হচ্ছে দোকান ও গাড়ির পার্কিং হিসেবে। সড়কগুলোতে তৈরি হয়েছে ছোটবড় গর্ত। বৃষ্টি হলে জমছে পানি। ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট সানিউল হক জানান, যাত্রাবাড়ী থেকে দোলাইরপাড় সড়কে গর্তের কারণে এক সপ্তাহে অন্তত ১০টি গাড়ি উল্টে গেছে। শুধু সড়কে নয়, ফ্লাইওভারেও যানবাহন বিকল হয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, ‘হানিফ ফ্লাইওভারকেন্দ্রিক রাস্তায় খানাখন্দ আছে। সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করেছি, তারা সংস্কারের কাজ করছে। এ ছাড়া অ-অনুমোদিত এক থেকে দেড় হাজার বাস ঢাকায় ঢুকে গেছে। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিমতলী ও চানখারপুলে ট্রাফিক-সংক্রান্ত কিছু কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে, যার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে।
0 Comments